একটা এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনের শখ ছিল অনেকদিন থেকেই। সবার প্রথমে ইচ্ছা ছিল একটা কোনরকম এন্ড্রয়েড হলেই হল (সবচেয়ে কমে যেটা পাওয়া যায় আর কি ) কিন্তু পরে রুমেল ভাই বলেছিলেন ‘তোমার জন্য ওটা পার্ফেক্ট হবে না। ওটাতে ফুল এন্ড্রয়েড এক্সপেরিয়েন্স পাবে না” তারপর একদিন গ্যালাক্সি পপ হাতে নিয়ে দেখে তেমন ভাল লাগে নি। তাই তখন ই চিন্তা করেছিলাম কিনলে মোটামুটি একটা ভাল দেখেই কিনব।
এরপর শুরু হল সেট চয়েজ করার পালা! সবার প্রথমে ইচ্ছা ছিল স্যামস্যাং গ্যালাক্সি Gio, তারপর Samsung Galaxy Ace, তারপর ইচ্ছা হল Motorola Defy এর। Motorola Defy তখন কিনেই ফেলেছিলাম তখন এমাজনে ওটার নিচে অন্যান্য রিকমেন্ড সেটের মধ্যে খোঁজ পেলাম ‘মটোরোলা এটিক্স ৪জি’ সেটটা দেখে gsmarena তে স্পেকস দেখে অবস্থা খারাপ! পুরা উড়াধুড়া সেট! দামও অন্যান্য ডুয়ালকোর প্রসেসর সেটের চাইতে কম। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম কিনলে এটাই কিনব।
তো সেট কেনা হল এমাজন থেকে। হাতে পেলাম ২৩ নভেম্বর ২০১১ ভালই চলছিল। কোন সমস্যা ছাড়াই। রুট করলাম। রুটেড এপস ইন্সটল করলাম সমস্যা ছাড়াই। চলছিল ভাই। তারপর একদিন হঠাৎ Font Changer (root) এপসটা দিয়ে ফন্ট চেন্জ করলাম সিস্টেমের। (আগেও করেছিলাম…কোন সমস্যা হয় নি!) এরপরই সমস্যাটার সম্মুখীন হলাম! ফোন ওপেন হয় না! স্টার্ট স্ক্রিন পার করার পরই ম্যাসেজ দেয়
modem did not power up (0)
গুগল সার্চ ধরলাম। ৩ঘন্টা সার্চ করে যা বুঝলাম এটার সমাধান হচ্ছে মটোরোলা রিপেয়ার সেন্টারে দেওয়া। ওরা ঠিক করে দেবে। নিজে নিজে ঠিক করার কোন টিউটোরিয়ালই নেই!!! বাংলাদেশে মটোরোলার কোন সাপোর্ট সেন্টারও নাই!
ব্যাপক চিন্তায় পড়লাম! কি করা যায়! আমার হার্টের অবস্থা মোটামুটি ১২ টা! তারপর ব্যাটারি খুলে চালু করলাম ডাইরেক্ট চার্জ দিয়ে! হল না…ব্যাটারি ২ঘন্টা খুলে রেখে লাগালাম তাও একই প্রবলেম! কাজ হয় না! তখন চিন্তা করে ফেললাম ফ্ল্যাশ করব!
আগে ভয়ে বুটলোডার আনলক করি নি! কিন্তু তখন অলরেডি বিপদে আছি! তাই বুটলোডার আনলক করলাম সমস্যা ছাড়াই। পুরা ফোন ওয়াইপ করে ফ্ল্যাশ করলাম CM7. তাও ঐ একই…
modem did not power up (0)
তখন কিঞ্চিত ধারণা জন্মাল হয়ত আসলেও হার্ডওয়্যার জনিত সমস্যা। কিন্তু তখন CM7 এ বুট করতে পেরেছিলাম Cold Booting Linux মেথডে। ফোন চলছিল কিন্তু নেটওয়ার্ক ছাড়া।
তারপর বহুত খুঁজে একটা টিউটোরিয়াল পেলাম যেটাতে বলেছে পুরো ওয়াইপ করে rsd মেথডে রম ইন্সটল করতে হবে। তাই করার সিদ্ধান্ত নিলাম! 1.4GB এর রম ডালো করে rsdlite দিয়ে ফ্ল্যাশ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। একজন বলছিল তার এই কাজ করে রোগ সেরে গেছে!
(এর মধ্যে ২দিন চলে গেছে। আমি ২দিনে মোট ১ বেলা খেয়েছি)
RSDlite দিয়ে ফ্ল্যাশ প্রসেস চালু হল। হচ্ছে হচ্ছে এমন সময় দেখি রিস্টার্ট হওয়ার পর যেখানে সেটাপ রিজ্যুম হওয়ার কথা তা না হয়ে ফোন অফ হয়ে গেছে! পরে সেট ওপেন করতে যেয়ে দেখি মটোরোলার স্টার্টাপ স্ক্রিনেও যায় না। অবস্থা কি হইছিল সেটার ভিডিও:
https://youtube.com/watch?v=XuV5A6mH-Qw%26amp
এইবার পড়লাম বিরাট টেনশনে! আগে তো তাও বাংলাদেশে ঠিক করানোর এটেম্পট নেওয়া যাইত! এবার তো সে সুযোগও নাই! কোন মোডেও প্রবেশ করে না! চিন্তা করলাম বাংলাদেশে মডুরোলার কোন ডিলার আছে কিনা..নাইগা! :'(
শেষ পর্যন্ত মটোরোলা সাইটে ঢুকে সেটের ওয়ারেন্টি দেখলাম! দেখলাম ওয়ারেন্টি আছে বছরের শেষ পর্যণ্ত (অক্টোবর পর্যন্ত ছিল মনে হয়)। ওদের লাইভ চ্যাটে কথা বললাম। বুঝিয়ে বললাম কি হয়েছে। ওরা বলল রিপেয়ার সেন্টারে দিলে ঠিক করে দেবে! আমি পড়লাম বিপাকে! বাংলাদেশের সেট USA এর রিপেয়ার সেন্টারে ক্যামনে দি? (মনে মনে ঠিক করলাম কুরিয়ারে পাঠাব) ওদের কে বলায় ওরা আমার সেটের রিপেয়ার আইডি ইস্যু করে দিল। কিভাবে সেট রিপেয়ার সেন্টারে পাঠাব তারও একটা মেইল দিল। (ওর মধ্যে একটা ছিল কিভাবে সেট নষ্ট হইছে এটার ব্রিফ ডেসক্রিপশন দেওয়া) কিন্তু পাঠাব তো কিন্তু ওরা কিভাবে দেশে পাঠাবে? ওদের বললাম, বলল যে ওরা কেবল মাত্র ইউএসএ’র যেকোন জায়গায় শিপ করবে (ফ্রি!)। বললাম বিডিতে করতে তাহলে আমি পে করব। কিন্তু তাও বলল যে ওরা কেবলমাত্র ইউএসএ তেই শিপ করবে! এবার ইউএসএ তে থাকে এমন একজনের শিপিং এড্রেস দরকার! আমার এক চাচী থাকে! তারে ফোন দিলাম রাত ১১:৪০ এর দিকে। উনার কাছ থেকে এড্রেস চেয়ে মটোরোলা কর্মীর কাছে দিলাম। ওরা আমার সেট ঠিক হয়ে কোন এড্রেস এ যাবে সেটাও ঠিক করে দিল।
আমি যেই কারণটা দেখাইছিলাম সেটা এরকম
এবার ফোনটা প্যাক করলাম (ঘরে একটা গহনার বাক্স ছিল সেটার মধ্যে)। ওটার মধ্যে উপরের কাগজটা প্রিন্ট করে দিলাম। বাক্সের উপর RMA নম্বর (রিপেয়ার আইডি), মটোরোলা এড্রেস লাগিয়ে ফেডেক্স অফিসে দিয়ে আসলাম। খরচ পড়ল ৩২০০ টাকা। (DHL এ চাইছিল ৫২০০ টাকা!!! )
ফেডেক্সের ট্র্যকিং নাম্বার দিয়ে ট্র্যাক করতে থাকলাম। ৭দিন লাগল মটোরোলা তে যেতে! তারপর সেই দিনের পালা! জানুয়ারির ১২ তারিখ মেইল এল ফোন রিপ্লেস হয়েছে।
আর মজার ব্যাপার হল আজকে আবার আমার হাতে সেটটা পেলাম। মটোরোলা নিউ সেট দিয়েছে। নেটওয়ার্ক লক করা ছিল। আগেরবারের মতই AT&T এর সাথে কথা বলে সেট আনলক করেছি।
এটাই ছিল আমার এন্ড্রয়েড অভিজ্ঞতা…
হোমস্ক্রিন:
ব্রিক করারও কিছু প্লাস পয়েন্ট আছে। যা যা শিখলাম:
১) ফোন ব্রিক হওয়ার পরও মাথা নষ্ট করার কিছু নেই। ধৈর্য্য ধারণ করলে মোটামুটি কোন না কোন উপায় বের হয়ে যাবে।
২) বুটলোডার আনলক, কাস্টম রম ইন্সটল, বুট এনিমেশন চেন্জ ইত্যাদি শেখা গেল।
৩) কিভাবে সেট/অন্যান্য জিনিস বিদেশে পাঠানো যায়।
৪) মটোরোলার সাথে কথা বলার অভিজ্ঞতা।
৫) এন্ড্রয়েড সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানা।
সবাইকে ধন্যবাদ যারা কষ্ট করে পড়লেন।
Add your first comment to this post